কম ভোটারের উপস্থিতিতে শেষ হলো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ
কম ভোটারের উপস্থিতিতে শেষ হলো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ
কম ভোটারের উপস্থিতিতে শেষ হলো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ রোববার সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয়েছে বিকেল চারটায়। রাজধানী বা বাইরে ভোটের চিত্রে দেখা গেছে, ভোটার উপস্থিতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কম। রাজধানীতে ভোটার আসার হার সবচেয়ে কম। তবে ঢাকার বাইরে বেলা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোথাও কোথাও বেড়েছে ভোটার উপস্থিতি।
বেলা ৩টা পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ভোট গ্রহণ অবশ্য সর্বত্র নির্বিঘ্ন ছিল না। কোথাও কোথাও জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। মুন্সিগঞ্জে সহিংসতায় ইতিমধ্যে প্রাণ গেছে একজনের। নরসিংদীতে জাল ভোট দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন শিল্পমন্ত্রীর ছেলে। ঢাকা-১৪ আসনে কল্যাণপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আগেই প্রার্থীদের এজেন্টদের কাছ থেকে রেজাল্ট শিটে (ফলাফল বিবরণী) স্বাক্ষর নিয়ে রাখা হয়েছে।
রাজধানীর কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের একটি বিশেষ বিষয় ছিল—গণমাধ্যমকর্মী বা পর্যবেক্ষকদের দেখে ভোটারের লম্বা সারি তৈরি। তবে গণমাধ্যমকর্মী ও পর্যবেক্ষকেরা চলে গেলে নিরুদ্দেশ হচ্ছে সেই সারি।
বিএনপিসহ বিরোধী বেশ কয়কটি দল এ নির্বাচন বর্জনের করেছিল। আজ বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আজ একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
আজ সকাল থেকে ভোট দেওয়ার হার ছিল বেশ কম। রাজধানীর সিটি কলেজে প্রথম দুই ঘণ্টায়, অর্থাৎ সকাল ১০টা পর্যন্ত ভোট পড়ে মাত্র ২ শতাংশ। ঢাকা-৭ আসনের আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রে সকাল থেকে ভোটারের উপস্থিতি একেবারেই কম। এই কেন্দ্রে প্রথম ৩ ঘণ্টায় ৭০ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৯১৪ জন।
রাজধানীর বাইরেও ভোটার উপস্থিতি যে চোখে পড়ার মতো, তা বলা যায় না।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার রয়েছেন ১ হাজার ৮২২ জন। সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরুর ২ ঘণ্টায় এই কেন্দ্রে ভোট পড়ে মাত্র ২০টি, যা মোট ভোটারের ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
তবে বেলা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার বাইরের কিছু স্থানে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গাজীপুর-২ আসনের তিনটি কেন্দ্র ঘুরে বেলা একটার দিকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা দেখেছেন, ৩ কেন্দ্রে ২৬ শতাংশ ভোট পড়েছে।
সহিংসতায় প্রাণ গেল একজনের
মুন্সিগঞ্জ-৩ (সদর এবং গজারিয়া) আসনে ভোটকেন্দ্রের পাশে আওয়ামী লীগ–মনোনীত প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসের এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার মীরকাদিম পৌরসভার টেঙ্গর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত মো. জিল্লুর রহমান মীরকাদিম পৌর শ্রমিক লীগের সহসভাপতি। মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সালের সমর্থকেরা হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পরিবারের।
জয়পুরহাট সরকারি মহিলা কলেজ ভোটকেন্দ্রের মূল ফটকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার সকাল সোয়া ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের দাবি, আতঙ্ক ছড়াতে কেউ পটকা ফুটিয়েছে।
জাল ভোট সমাচার
নরসিংদী-৪ (বেলাব-মনোহরদী) আসনের একটি কেন্দ্রে ১২টি ব্যালট বই ছিনিয়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগে ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বাতিল করা হয়েছে।
আজ সকাল ৯টার দিকে কেন্দ্রটির ভোট গ্রহণ বাতিল করেন নরসিংদীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বদিউল আলম। আজ সকাল আটটার দিকে বেলাব উপজেলার সল্লাবাদ ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই জাল ভোট দেওয়ার ঘটনা ঘটে। যাঁর বিরুদ্ধে এই জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ, তিনি আসনটির নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের ছেলে মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদী।
চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সামশুল হক চৌধুরীর পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্তত ২০টি কেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি বা বের করে দেওয়া হয় বলে বেলা ১১টার দিকে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন প্রার্থীর প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী নাজমুল করিম।
ক্যামেরা দেখলেই দীর্ঘ সারি, পরে নেই
রাজধানীসহ দেশের একাধিক আসনের কেন্দ্রে দেখা গেছে, গণমাধ্যমের ক্যামেরা বা পর্যবেক্ষক দেখলে সেখানে কৃত্রিম সারি তৈরি করা হচ্ছে। তারা চলে গেলে যাচ্ছেন সারিতে দাঁড়ানো ‘ভোটাররা’।
রাজধানীর বনানী মডেল স্কুল কেন্দ্রে দুপুর ১২টার দিকে একজন বিদেশি পর্যবেক্ষক আসার আগে তৈরি হয় ভোটারের দীর্ঘ সারি। তবে সেই পর্যবেক্ষক চলে যাওয়ার পরই কেন্দ্রটি প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়।
ঢাকা-১৭ আসনের চারটি ভোটকেন্দ্র বনানী মডেল স্কুলে। কড়াইল এলাকার নারী ভোটারদের জন্য এই চার কেন্দ্র।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে বনানী মডেল স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, ভোটকেন্দ্রের বুথগুলোর সামনে কিছুসংখ্যক ভোটার রয়েছেন। ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে হঠাৎ অনেক নারী ভোটার লাইন দিতে থাকেন। একপর্যায়ে লাইনটি স্কুলমাঠ পেরিয়ে সড়কে চলে যায়।
নির্বাচনে বেশি ভোট পড়ছে খুলনায়, কম সিলেটে
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্র জানিয়েছে, রোববার বেলা ২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত হিসাবে দেখা গেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশি ভোট পড়ছে খুলনা বিভাগে, কম সিলেটে। এছাড়াও ঢাকা বিভাগের আসনগুলোতে ২৫ শতাংশ, ময়মনসিংহ ২৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম ২৭ শতাংশ, রাজশাহী ২৬ শতাংশ, খুলনা ৩১ শতাংশ, রংপুর ২৬ শতাংশ, সিলেট ২২ শতাংশ ও বরিশালে ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে। সার্বিকভাবে কত শতাংশ ভোট পড়েছে, তা জানা যায়নি।
বিরোধীদের প্রত্যাখ্যান
জনগণ ‘ডামি নির্বাচন’ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আজ একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটার নেই। একতরফা এই নির্বাচনেও রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়েছে।’
নির্বাচনকে ‘ভোটার ছাড়া নির্বাচন’ বলে অভিহিত করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। আজ দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশে তাঁরা এসব কথা বলেন। ‘ভোট বর্জন’-এর আহ্বান জানিয়ে আজ দুপুরে এ সমাবেশের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ। সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না নির্বাচনকে ‘ডামি ভোট’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ তো নাই। ভোটার নাই। এটা একটা ভোটার ছাড়া নির্বাচন।’
নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে যাচ্ছে না বলে দাবি করেছে গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি। আজ বেলা দুইটার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে দল দুটির নেতারা এসব কথা বলেন। সমাবেশের আগে প্রেসক্লাব ও পুরানা পল্টন এলাকায় ভোট বর্জন ও হরতালের সমর্থনে মিছিল করেন দল দুটির নেতা-কর্মীরা।
ভিন্ন দলের এজেন্টের অভাব
অনেক কেন্দ্রে নৌকা ছাড়া ভিন্ন দলগুলোর প্রার্থীদের এজেন্টদের পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে সকালে ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে। আজ এ আসনের পাঁচটি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র। এ আসনে আট প্রার্থী থাকলেও তিনজন প্রার্থীর এজেন্ট রয়েছে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে। বাকি পাঁচ প্রার্থীর কোনো এজেন্ট নেই।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, তিনি ভোটকেন্দ্রে নৌকার পোলিং এজেন্ট ছাড়া অন্য কারও এজেন্ট দেখতে পাননি। সিইসি আউয়াল বলেন, ‘আমি যেগুলো পেয়েছি, সবাই একই দলের। নৌকার পক্ষে বা ইয়ে...পোলিং এজেন্ট। বাদবাকি প্রার্থীদের কোনো লোকজন দেখতে পাইনি।’
আজ নিজের ভোট দিয়ে নির্বাচন ভবনে ফিরে সাংবাদিকদের এ কথা জানান সিইসি।
What's Your Reaction?