আল্লাহ, আমার মেয়েটাকে জীবিত ফিরিয়ে দাও

‘আল্লাহ, আমার মেয়েটাকে জীবিত ফিরিয়ে দাও’ উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত: নিখোঁজ ৯ বছরের রাইসা বাংলাদেশ টুডেস্ | ঢাকা, ২৩ জুলাই ২০২৪

 0
আল্লাহ, আমার মেয়েটাকে জীবিত ফিরিয়ে দাও

উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত: নিখোঁজ ৯ বছরের রাইসা

রাজধানীর উত্তরা যেন সোমবার দুপুরে রূপ নিয়েছিল বিভীষিকাময় এক মৃত্যুপুরীতে। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকেই ঘরে ঘরে নেমে এসেছে কান্নার রোল। এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২৭ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন ১৭০ জনের বেশি। তাদের মধ্যে ৪৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী চিকিৎসক ডা. মো. সায়েদুর রহমান জানিয়েছেন, আহতদের অধিকাংশের শরীরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত দগ্ধ হয়েছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার মধ্যেও সবচেয়ে বেদনাদায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে নয় বছরের এক শিশু শিক্ষার্থীর সন্ধান না পাওয়ার ঘটনা।

নিখোঁজ শিশুটির নাম রাইসা মনি (৯) । ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সাহাবুল শেখের মেয়ে রাইসা মাইলস্টোন স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে স্কাইস সেকশনে পড়ত। দুর্ঘটনার ঠিক আগমুহূর্তে ক্লাস শেষ হয়েছিল এবং সে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কিন্তু সেই বাড়ি ফেরা আর হলো না রাইসার। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকেই তার কোনো খোঁজ মেলেনি। অগ্নিদগ্ধদের তালিকায় নাম নেই, মৃতদের তালিকাতেও নয়। স্বজনরা দিশেহারা হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে।

মায়ের মুখে এখন শুধু একটিই প্রার্থনা—
“আল্লাহ, আমার মেয়েটাকে জীবিত ফিরিয়ে দাও। ওর স্কুলব্যাগটা পড়ে ছিল ক্লাসে—ও কোথায় গেল?”

সোমবার রাতে রাইসার চাচা মো. ইমদাদুল হক সাংবাদিকদের জানান, “আমার ভাতিজি রাইসা মনির কোনো হদিস পাচ্ছি না। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটসহ উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখেছি। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাইনি।”

সন্তানের অনুপস্থিতি প্রতিটি মুহূর্তে নিঃশ্বাস রুদ্ধ করে তুলছে রাইসার পরিবারকে। বাবা-মা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। হঠাৎ করে পৃথিবী যেন তাদের জন্য থেমে গেছে।

সোমবার দুপুর ১টা ১৮ মিনিটের দিকে মাইলস্টোন কলেজের মূল ভবনের পেছনের অংশে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। তখন শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষ করে মাঠে খেলছিল কেউ, কেউ বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই গোটা ক্যাম্পাস পরিণত হয় মৃত্যুকূপে।

ঘটনার পর উত্তরার আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, লুবানা, সিএমএইচ, কুর্মিটোলা বিমানবাহিনী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আহতদের ভর্তি করা হয়। তবুও এখনো অনেকের কোনো হদিস নেই। রাইসার মতো আরও কয়েকজন শিশু এখনো নিখোঁজ। পরিবারগুলো আশায় বুক বেঁধে হাসপাতালের করিডোরে ঘুরে বেড়াচ্ছে—হয়তো কোনো বার্তা আসবে, কেউ একজন বলবে—“এখানে একজন মেয়ে আছে, নাম রাইসা।”

প্রিয় মুখ হারিয়ে আত্মীয়রা এখন শুধুই চোখের জলে খুঁজে ফিরছেন প্রিয়জনকে। যেন কোনো দুঃস্বপ্নের ভেতর আটকে গেছে তাদের জীবন। সময় এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মেয়েটির খোঁজ মেলছে না। হাসপাতালের দেয়ালে ভর করে শুধু কান্নার শব্দ—তিন তলা থেকে নিচে নামা সেই ছোট্ট রাইসা কি কোথাও এখনও বেঁচে আছে?

ঘটনার ভয়াবহতা এবং নিখোঁজ রাইসার পরিবারের আকুতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, উন্নয়ন ও প্রযুক্তির অগ্রগতির মাঝেও একটি ব্যর্থ মুহূর্ত কীভাবে অসংখ্য জীবনের সুখ কেড়ে নিতে পারে।

এখন সময় দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা এবং নিখোঁজদের সন্ধানে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণের। রাইসার মতো আরও কেউ যেন না হারিয়ে যায় অন্ধকারে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow