গুলি ছোড়া ও বলপ্রয়োগে সীমাবদ্ধতা: পুলিশ সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ
বিক্ষোভ দমনে গুলি ও প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠার পর পুলিশ সংস্কার কমিশন বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচটি ধাপ সুপারিশ করেছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে সমর্থন করার পাশাপাশি অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এই সুপারিশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পুলিশের কাছ থেকে প্রাণঘাতী অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাবও এসেছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নির্বিচারে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের পর বিক্ষোভ দমনে গুলির ব্যবহার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ সংস্কার কমিশন উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি করার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের পাশাপাশি বলপ্রয়োগের পাঁচটি ধাপ অনুসরণের সুপারিশ করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর নীতিমালা এবং পুলিশ প্রবিধান, ১৯৪৩ অনুযায়ী বলপ্রয়োগের এই ধাপগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে পুলিশ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ হিসেবে নিরপেক্ষ পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাবও রয়েছে।
বলপ্রয়োগের পাঁচটি ধাপ
পুলিশ সংস্কার কমিশন বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচটি ধাপ সুপারিশ করেছে:
- শারীরিক সংস্পর্শ ছাড়া অবৈধ জনতাকে বাধা প্রদান: শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশ সদস্যরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে নিয়োজিত হবেন।
- বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে নিয়ন্ত্রণ: যদি জনতা অবৈধ ঘোষণা করা হয় এবং ছত্রভঙ্গ না হয়, তখন গ্যাস স্প্রে, সাউন্ড হ্যান্ড গ্রেনেড, জলকামান প্রভৃতি ব্যবহার করা যাবে।
- স্বল্প বা ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার: মারমুখী আচরণ বা ভাঙচুরের ক্ষেত্রে শটগান, ইলেকট্রিক পিস্তল প্রভৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
- দলগত অস্ত্রের ব্যবহার: ব্যাপক হিংসার ক্ষেত্রে দলগত অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি থাকবে।
- আত্মরক্ষা ও সম্পত্তি রক্ষার অধিকার: শুধুমাত্র পুলিশ সদস্যদের আত্মরক্ষা বা সম্পত্তি রক্ষার জন্য জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করা যাবে, তবে এই অধিকারও সীমাবদ্ধ থাকবে।
পুলিশের প্রাণঘাতী অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব
গত বছরের ১৬ জুলাই থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পতন (৫ আগস্ট) পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক মানুষ হতাহত হয়েছেন। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, নাম-ঠিকানা জানা গেছে এমন আহতের সংখ্যা ১১ হাজার ৫৫১ এবং নিহতের সংখ্যা ৮২৬। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির হিসাব অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ মৃত্যুই হয়েছে গুলিতে। এ অবস্থায় পুলিশের কাছ থেকে প্রাণঘাতী অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাবও এসেছে।
শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের সমর্থন
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ বা বিক্ষোভ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যরা নিরাপদে দৃশ্যমানভাবে নিয়োজিত হবেন। তবে যদি জনতা মারমুখী আচরণ করে বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়, তখনই ধীরে ধীরে বলপ্রয়োগের পরবর্তী ধাপে যাওয়া যেতে পারে।
এই সুপারিশগুলো বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে, যা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে সমর্থন করার পাশাপাশি অতিরিক্ত বলপ্রয়োগকে নিয়ন্ত্রণে আনবে।
What's Your Reaction?