সমর্থন অক্ষুণ্ণ থাকবে
সমর্থন অক্ষুণ্ণ থাকবে
![সমর্থন অক্ষুণ্ণ থাকবে](https://bangladeshtodays.com/uploads/images/202309/image_870x_64fbea80dce40.jpg)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং একই সঙ্গে উভয়ে সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘উভয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং এই সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছেন।’ তিনি বলেন, মোদি আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানের ওপরও জোর দিয়েছেন।
এই পটভূমিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা (পলিটিক্যাল স্ট্যাবিলিটি) রক্ষায় ভারতের দৃঢ় সমর্থন ও সাহায্যের অঙ্গীকার অক্ষুণ্ণ থাকবে। ভারত বৈঠকে এই আশ্বাস দিয়েছে। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় টুইট বার্তায় উল্লেখ করেছে যে ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বৈচিত্র্য আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন। খবর বাসস ও বিবিসির।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ করেন। এছাড়াও ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে চলমান প্রচেষ্টা জোরদারে দুই দেশ একমত পোষণ করে। এ সময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দ্রুততম প্রত্যাবাসনে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়। এছাড়াও দুই দেশের কৃষি গবেষণা খাতে সহযোগিতা, শিল্প-সাহিত্য ও দুই দেশের মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়।
দুই দেশের মধ্যকার বৈঠকের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী হিসেবেই বাংলাদেশকে এই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, জি-টোয়েন্টিতে দু’ডজনেরও বেশি সদস্য ও আমন্ত্রিত দেশের নেতাদের উপস্থিতির মধ্যেও স্বাগতিক দেশ ভারত প্রতিবেশী বাংলাদেশকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে।
মোমেন বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের জন্য তার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।’ এখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে, নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে বিকেলে এখানে পৌঁছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন যে গত বছরের ৪ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে তার সফল রাষ্ট্রীয় সফরের পর দ্বিপক্ষীয় স্বার্থের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এই প্রসঙ্গে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দুই প্রধানমন্ত্রী এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।’ বৈঠকে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্যের কথা জানান।
মোমেন যোগ করেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।’ তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হওয়ায় ভারত থেকে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে শেখ হাসিনা ভারত সরকারকে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘উভয় প্রধানমন্ত্রীই রেল ও সড়ক যোগাযোগসহ ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর জন্য আমাদের চলমান প্রচেষ্টা এবং কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন।’ শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে নরেন্দ্র মোদির সহযোগিতাও কামনা করেন। মোমেন বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এই ফলপ্রসূ ও উন্মুক্ত আলোচনা দুই পক্ষের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর নিষ্পত্তিকে ত্বরান্বিত করবে এবং উভয় দেশের জনগণ এর দ্বারা উপকৃত হবে।’
তিনি দ্বিপক্ষীয় বৈঠককে ফলপ্রসূ আখ্যায়িত করে বলেন, এটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই সময় উভয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং উভয় সরকারপ্রধান একান্ত বৈঠকেও মিলিত হন।’ শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথাও স্মরণ করেন। তিনি ‘জি-২০ নেতাদের’ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের অনুন্নত অংশের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জি-২০ বৈঠকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’-এর ওপর দুটি ভাষণ দেবেন। ‘এক পৃথিবী’ এবং ‘এক পরিবার’ অধিবেশন চলাকালীন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড মহামারির পরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইউরোপে যুদ্ধের ফলে খাদ্য, সার এবং জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় পণ্যগুলির বৈশ্বিক সরবরাহের মারাত্মক ব্যাঘাতের মতো চ্যালেঞ্জগুলো কিভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নির্দেশ করবেন। এছাড়া বর্তমান সরকারের মেয়াদে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যের অভিজ্ঞতাও প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণকারী বিশ্বনেতাদের কাছে তুলে ধরবেন।
ভারতের জি-২০ সভাপতিত্ব ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল এবং এই সভাপতিত্বের মেয়াদে ভারত বাংলাদেশসহ মোট নয়টি দেশের সবক’টিকে জি-২০ সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। দেশগুলো হলো-বাংলাদেশ, মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজিরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী পর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পর্যায়ের এবং ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে আলোচিত এবং সম্মত হওয়া অগ্রাধিকারগুলোর প্রতি নেতৃবৃন্দের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে একটি জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণা গৃহীত হবে।
গ্রুপ অব টুয়েন্টি (জি২০) হলো আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রধান ফোরাম। এটি সমস্ত প্রধান আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ইস্যুতে বৈশ্বিক স্থাপত্য এবং শাসন শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৯৯ সালে এশীয় আর্থিক সংকটের পরে অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য জি২০ একটি ফোরাম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
জি-২০ ১৯টি দেশ (আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। জি-২০ সদস্য দেশগুলো বিশ্বব্যাপী জিডিপির প্রায় ৮৫ শতাংশ, বিশ্ব বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের বেশি এবং বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে- টুইট বার্তায় মোদি ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইট বার্তায় বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার অত্যন্ত ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তার সরকারের বিগত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি অত্যন্ত সন্তোষজনক। আমাদের আলোচনায় যোগাযোগ, বাণিজ্যিক সংযোগ এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে নয়া দিল্লিতে পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পর বিকেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই নেতা বৈঠক করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা তার সঙ্গে রয়েছেন।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়নি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে গণমাধ্যম ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যু নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। মোমেন বলেন, বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে কেউ অস্থিতিশীলতা চায় না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ২০০১ সালের পরের খারাপ সময়ে ফিরে যেতে চায় না যখন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল, সারাদেশে বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং আদালত কক্ষে বিচারকদের ওপর বোমা হামলা হয়েছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত দুই প্রতিবেশী দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে একান্ত বৈঠকে নির্বাচনের বিষয় নিয়ে কথা উঠেছিল কি না, তার জানা নেই।
What's Your Reaction?
![like](https://bangladeshtodays.com/assets/img/reactions/like.png)
![dislike](https://bangladeshtodays.com/assets/img/reactions/dislike.png)
![love](https://bangladeshtodays.com/assets/img/reactions/love.png)
![funny](https://bangladeshtodays.com/assets/img/reactions/funny.png)
![angry](https://bangladeshtodays.com/assets/img/reactions/angry.png)
![sad](https://bangladeshtodays.com/assets/img/reactions/sad.png)
![wow](https://bangladeshtodays.com/assets/img/reactions/wow.png)