বাংলাদেশ বিষয়ে জাতিসংঘে মার্কিন দূতকে ১৪ কংগ্রেস সদস্যের চিঠি

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের ১৪ সদস্য। একই সঙ্গে তাঁরা জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের সদস্যপদ স্থগিত রাখার আহ্বান জানান। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তাঁরা গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ডকে চিঠি দিয়েছেন।

Jul 28, 2023 - 22:58
 0
বাংলাদেশ বিষয়ে জাতিসংঘে মার্কিন দূতকে ১৪ কংগ্রেস সদস্যের চিঠি
বাংলাদেশ বিষয়ে জাতিসংঘে মার্কিন দূতকে ১৪ কংগ্রেস সদস্যের চিঠি

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের ১৪ সদস্য। একই সঙ্গে তাঁরা জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের সদস্যপদ স্থগিত রাখার আহ্বান জানান। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তাঁরা গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ডকে চিঠি দিয়েছেন।

চিঠি পাঠানোর পর গতকাল বৃহস্পতিবার রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য বব গুড এক টুইট বার্তায় (বর্তমান এক্স) বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অধিকার রয়েছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর বাংলাদেশ সরকারের সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে আমি ও আমার ১৩ সহকর্মী জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছি।’

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আজ শুক্রবার টেলিফোনে কংগ্রেস সদস্য বব গুডের কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে একজন মুখপাত্র চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্রও কংগ্রেস সদস্যদের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ডকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের সন্ত্রাস, নির্যাতন, এমনকি বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ জানাতে তাঁরা এ চিঠি লিখেছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ফ্রিডম হাউস, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসসহ অনেক মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য নথিভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভয়ভীতি, হামলা, মিথ্যা মামলায় কারাদণ্ড, নির্যাতন, গুম, এমনকি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

এ ছাড়া জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করেছেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ ‘সাংবাদিক ও মানবাধিকার রক্ষাকারীদের বিলম্বিত বিচারের জন্য’ দায়ী। বিশেষ করে দেশটির আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে আছে নির্যাতন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, যা নিন্দাযোগ্য।

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র র‍্যাবের বর্তমান-সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ। তবে এ নিষেধাজ্ঞা হাসিনা সরকারের ভীতির রাজত্বকে মন্থর করেনি; বরং সরকারের দিক থেকে ভয়ভীতি ও সহিংসতা বেড়েছে।

দেশটিতে গত ছয় থেকে আট মাসে হাজারো শান্তিপূর্ণ ও সাহসী বিক্ষোভকারী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। এসব বিক্ষোভ প্রায়ই সহিংসতা, কাঁদানে গ্যাসের শেল, পুলিশসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থা ও শেখ হাসিনার সমর্থকদের নির্মম হামলার শিকার হয়েছে।

চিঠিতে কংগ্রেস সদস্যরা বলেন, ‘নির্বাচনে জালিয়াতি, সহিংসতা, ভয়ভীতির অতীত ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা সরকার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন হতে দেবে—এমন বিষয়ে আমরা অত্যন্ত সন্দিহান। এসব কারণ ছাড়াও দুর্নীতি, অত্যাচার, সহিংসতা, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ অন্য অনেক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নিচে উল্লেখিত বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি—

* জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের সদস্যপদ অবিলম্বে স্থগিত করতে ব্যবস্থা গ্রহণ। সাংবাদিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের সহিংস কর্মকাণ্ডের যে অভিযোগ রয়েছে, তা নিয়ে একটি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত করা।
* মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে পূর্ণ ও স্বচ্ছ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত র‍্যাবের কোনো সদস্যকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন করার বিষয়টি সাময়িকভাবে বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ।
* বিশ্বের নিরপেক্ষ সরকারগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে জাতিসংঘ বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন তত্ত্বাবধান ও পরিচালনায় অংশ নেবে। এতে ভোটারদের ভয়ভীতি, হয়রানি বা তাঁদের ওপর হামলা রোধে শান্তিরক্ষী বাহিনী রাখার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow