মনমরা দেখতে চাই না

মনমরা দেখতে চাই না

মনমরা দেখতে চাই না
মনমরা দেখতে চাই না

বিরোধী দলের আন্দোলনে ভয় পেয়ে প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তাদের মুখ মনমরা অবস্থায় দেখতে চান না বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, আন্দোলন দেখে ভয় পাবেন না। অনেকে এখন আন্দোলন, জ্বালাও পোড়াও করবে। করুক। আন্দোলন যে কেউ করতে পারে, কিন্তু জ্বালাও পোড়াও করতে দেব না। মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। আর এই মন মরা (গোমরা) অবস্থা দেখতে চাই না কাউকে। যেকোনো সমস্যা আসবে, সেটা মোকাবিলা করার মতো মনোবলও থাকতে হবে। গতকাল সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক-২০২৩ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় দেশের জনপ্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১২টি ক্যাটাগরিতে ২৮ জন ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক’ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনীতদের হাতে পদক তুলে দেন।

বিরোধী দলগুলোর সাম্প্রতিক আন্দোলন দেখে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভয় না পাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা বলেন, একটু আন্দোলন-সংগ্রাম দেখে ভয় পাবেন না, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। জনগণ যতক্ষণ আমাদের সঙ্গে আছে। যারা আন্দোলন করতে চায়, জ্বালাও-পোড়াও করতে চায়। জ্বালাও- পোড়াও আমরা কখনোই মেনে নেওয়া যাবে না। তবে আন্দোলন বা সংগ্রাম যাই করুক, তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কখনও কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না। তিনি বলেন, একটা কথা মনে রাখবেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা আমাদের সমর্থন করেনি, তাদের মনের বৈরিতা এখনও কেটে যায়নি। কিন্তু সেটা অতিক্রম করেই কিন্তু আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। সেজন্য এই মুখ গোমড়া করে থাকা আমি দেখতে চাই না, সবাইকে হাসিখুশি দেখতে চাই। যেকোনও সমস্যা আসবে, সেটা মোকাবিলা করার মতো মনোবল দরকার হয়, শক্তি দরকার হয়। সেই শক্তি নিয়ে চললে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, এটাই আমি বিশ্বাস করি।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। স্বাস্থ্যসেবা সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। শতভাগ মানুষের ঘরবাড়ি থাকবে। কেউ পিছিয়ে থাকবে না। উন্নতি হবে সবার। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত আমাদের কাজের ছাপ রাখছি। আগে যে হাহাকার ছিল, এখন কিন্তু সেটি নেই। আগে মিটিং করতে গেলে দেখতাম ছেঁড়া কাপড়। এখন সেটি দেখি না। দ্রব্যমূল্য নিয়েও ঢাকায় যতটা হাহাকার, গ্রামগঞ্জে কিন্তু সেটি নেই। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা। আমরা পরিকল্পনা করে দিয়েছি, এখন ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের পালা।

শেখ হাসিনা বলেন, পুরস্কার পাওয়ার পর কারও মধ্যে হাসিখুশি দেখছি না। সবার মধ্যে মন মরা, মন মরা ভাব কেন? সবাইকে হাসি-খুশি থাকতে হবে। যারা পুরস্কার পেয়েছেন, অভিনন্দন। যারা পাননি, ভবিষ্যতে পাবেন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে প্রচ- চাপ আমাদের না শুধু, সারা বিশ্বব্যাপী। উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু আমরা করোনা মোকাবিলা করে বিশ্বে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছি। অর্থনৈতিক চাপ আছে, কিন্তু অর্থনৈতিক গতিশীলতা ধরে রেখেছি। এর পেছনে যারা কাজ করেছে, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আপনারা আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন বলেই এটি সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রিত্ব বড় কথা না। আমি মনে করি, জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। সেটাই করে যাচ্ছি। সব ধরনের সেবা কীভাবে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা করছি। কেউ ভালো কাজ করলে পুরস্কার দেওয়া, বিদেশ থেকে কর্মকর্তাদের ট্রেনিং করিয়ে নিয়ে আসা, এগুলো জাতির পিতা শুরু করেছেন। আমরা সেটা অব্যাহত রেখেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের করা কমিউনিটি ক্লিনিক বিএনপি বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ, মানুষ এখান থেকে সেবা নিয়ে নাকি আমাকে ভোট দেবে। মানুষের কথা তারা চিন্তা করেনি। তাদের চিন্তা ছিল ভোটের। এটার ফলও পেয়েছে। ২০০৮-এর নির্বাচনে মাত্র ২৯টা সিট পেয়েছে তারা। আমরা সরকার গঠন করি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের দক্ষতা, মননশীলতা এবং উদ্ভাবনী প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করতে ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন বিভাগে এই পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস প্রতি বছর ২৩ জুলাই পালিত হচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সে সময় ইতালিতে সরকারি সফরে থাকায় ২৩ জুলাই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়নি। পুরস্কার প্রাপকরা তাদের নামের শেষে টাইটেল হিসাবে বিপিএএ শিরোনাম ব্যবহার করতে পারেন। প্রত্যেককে একটি স্বর্ণপদক (১৫ গ্রাম ওজনের) এবং রাষ্ট্রীয় মনোগ্রামসহ একটি প্রশংসাপত্র দেয়া হয়। ব্যক্তিগত অবদানের জন্য ২ লাখ টাকা এবং দলগত অবদানের জন্য ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।

বিএনপির অপকর্মের কারণে জরুরি অবস্থা এসেছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন ২০০৯-এ সরকার গঠন করি, তখন আমাদের রিজার্ভ কত ছিল? ১ বিলিয়নও ছিল না। বোধ হয় শূন্য দশমিক ৭৪ এ রকম ছিল। আমাদের আর্থিক সংগতি তেমন ছিল না। তার ওপর চরম বিশৃংখলা ছিল। বিএনপির ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, বোমা, গ্রেনেড হামলা, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং এসব অপকর্ম, যার ফলে দেশে ইমার্জেন্সি হয়। ২০০৭-০৮ ইমার্জেন্সি। এই অবস্থার মধ্যে দেশের অর্থনীতি একেবারে স্থবির হয়ে পড়ে এবং একটা বিশৃংখল অবস্থা। সেই সবগুলো গুছিয়ে আনতে সময় নেয়। আজকের আমাদের অর্থনীতি; যদিও মুদ্রাস্ফীতির চাপ আছে, তারপরও কিন্তু গতিশীল রাখতে পেরেছি।

দেশে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি দেশের যখন উন্নতি হবে, সেই উন্নতিটা হবে তৃণমূল থেকে। আমি কয়েকদিন আগে গ্রামে গেলাম। এখানে জিনিসের দাম নিয়ে যত হাহাকার গ্রামে কিন্তু সেটা নাই। সেখানকার মানুষ কিন্তু ভালোই আছে। তারা নিজেরা উৎপাদন করছে এবং তারা চলতে পারছে ভালোভাবেই।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow