নির্বাচনের আগে আসছে বিশেষ অভিযান!

নির্বাচনের আগে আসছে বিশেষ অভিযান!

নির্বাচনের আগে আসছে বিশেষ অভিযান!

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী চলবে বিশেষ অভিযান। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও পেশাদার সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে এই অভিযান চালানো হবে। নির্বাচনের আগে যে কোনো ধরনের সহিংসতা রোধে এ ধরনের বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনাও আসছে। পাশাপাশি সীমান্তে অস্ত্র চোরাচালান রোধেও বিশেষ নজরদারি চালানো হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, নির্বাচনের আগে আমাদের বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে। ঐ সময় বৈধ অস্ত্রগুলো কোথায় আছে, তার হিসাব মেলানো হবে এবং জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হবে। পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে জোর অভিযান সব সময়ই চলে। প্রতি মাসের ক্রাইম কনফারেন্সে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের প্রতি ইউনিটগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সম্প্রতি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে গেছে। এই সুযোগে একটি মহল দেশে সহিংসতা করে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে। ঐ মহলটি সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আনছে বলে পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সম্প্রতি সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র আনা হচ্ছে মর্মে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে নড়েচড়ে বসেন গোয়েন্দারা। তারা ব্যাপক অনুসন্ধান করে এর সত্যতা পান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের গোয়েন্দারা বিশেষ অভিযানের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সরকারের ঊর্ধ্বতনদের জানান। বিষয়টি যাচাই-বাছাই শেষে সেপ্টেম্বর মাসে এই বিশেষ অভিযান চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি মন্ত্রণালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা, রাজধানী ও চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনা বেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অস্ত্র উদ্ধারের চলমান অভিযানকে সফলতা বলা হলেও গোয়েন্দারা মনে করছে, এর বাইরে আরও অনেক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দেশে প্রবেশ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত ৩০ জুলাই রাজধানীর শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ইসমাইল হোসেন ওরফে বাচ্চুর ব্যক্তিগত সহকারী মানিক গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় তাদের দুই জনকেই গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। প্রথমে বিষয়টি ছিনতাইকারীর হাতে গুলিবিদ্ধ বলে প্রচারণা চালানো হলেও পরে একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় বাচ্চুর ব্যক্তিগত অস্ত্র থেকেই গুলিটি বের হয়। তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইসমাইল হোসেন নিজেই তার অস্ত্র দিয়ে তার ব্যক্তিগত সহকারী মানিককে গুলি করতে পারেন। তারপর ছিনতাইয়ের ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ কারণে নির্বাচনের আগেই বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা আসছে। 

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দেওয়া তথ্যমতে, জুলাই মাসে একটি পিস্তল, একটি এয়ার পিস্তল, একটি বন্দুক, ৯৫ কেজি সালফার ও ৪৩৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়েছে। জুন মাসে একটি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, একটি মর্টার  শেল, ১৬ রাউন্ড গুলি ও ১০ কেজি পেট্রোল বোমা তৈরির পাউডার উদ্ধার হয়েছে। গত মে মাসে সীমান্ত এলাকায় চলতি বছরের সর্বোচ্চ আটটি পিস্তল জব্দ করা হয়। সঙ্গে ছিল ৪০ রাউন্ড গুলি ও আটটি ম্যাগাজিন, যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়াও উদ্ধার করা হয়েছে ১০০ কেজি সালফার, সাতটি ডেটোনেটর ও চারটি বিস্ফোরক স্টিক। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে সীমান্তে ৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি সাবমেশিনগানও (এসএমজি) রয়েছে। এর আগের ১০ বছরে মাত্র একটি এসএমজি উদ্ধার হয়েছিল। এ বছর এখন পর্যন্ত ৬৯৫ রাউন্ড গোলাবারুদ ও ২০টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী। গোয়েন্দাদের ধারণা সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনা হচ্ছে। আর এসব অস্ত্র বাহকদের বেশির ভাগই স্থানীয় সাধারণ মানুষ। আর বড় অংশই হাতবদল হয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধ অস্ত্র রাজধানীতে প্রবেশ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেফতার কয়েক জনকে গ্রেফতারের পর এমনই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow